অ্যান্ড্রয়েড-১৩-এর চমকের রেশ কাটতে না কাটতেই অ্যান্ড্রয়েড-১৪ নিয়ে কাজ শুরু করে দিয়েছে গুগলের প্রকৌশলীরা। নতুন চমকগুলোর মধ্যে অ্যান্ড্রয়েড-১৪-এর যে ফিচারটি নিয়ে ইতোমধ্যে সমূহ সম্ভাবনার উঁকি দিচ্ছে তা হলো সরাসরি স্যাটেলাইট সংযোগ। গুগল প্ল্যাটফর্ম ও ইকোসিস্টেমের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট হিরোশি লকহেইমার টুইটারে ঘোষণা করেছেন যে, গুগল অ্যান্ড্রয়েড-১৪ ফোনে সরাসরি স্যাটেলাইট সংযোগ তৈরিতে কাজ করছে। চলুন, এ ব্যাপারে আরো কিছু জেনে নেয়া যাক।
কবে নাগাদ আসবে অ্যান্ড্রয়েড-১৪ ফোন
শুরু থেকেই বিভিন্ন ধরনের মিষ্টির নামে নাম রাখার প্রবণতাটা গুগলের এই অপারেটিং সিস্টেমগুলোর জন্য রীতিমত প্রথা হয়ে দাড়িয়েছে। সেই ধারাবাহিকতায় এই ১৪ নাম্বার সংস্করণটিরও নাম রাখা হয়েছে আপসাইড ডাউন কেক। এটি মুলত একটি আমেরিকান কেক যা প্যানে উল্টো করে বেক করা হয়।
২০২৩-এর মে মাসে গুগল ডেভেলপারদের বার্ষিক সম্মেলন গুগল আই/ও ২০২৩-এ অ্যান্ড্রয়েডের নতুন ভার্সনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা হতে পারে। তবে এর ডেভেলপার প্রিভিউ বিল্ড ফেব্রুয়ারিতে এবং বেটা বিল্ড এপ্রিলে মুক্তি পেতে পারে। কিন্তু পূর্ণাঙ্গ অ্যান্ড্রয়েড-১৪-এর মুক্তি হতে হতে আগস্ট মাস লেগে যেতে পারে।
পড়ুন: জাপানে ছোট দোকানগুলোতে ব্যবহার করা হচ্ছে বুদ্ধিমান রোবট
অ্যান্ড্রয়েড-১৪ ফোনে সরাসরি স্যাটেলাইট সংযোগ-এ কি সুবিধা পাবেন ব্যবহারকারীরা
অ্যান্ড্রয়েড-১৪ ব্যবহারকারীরা বিশ্বের যে কোনও জায়গা থেকে একটি নেটওয়ার্কের সাথে সংযোগ করতে সক্ষম হবেন। এমনকি প্রত্যন্ত এলাকায়ও নেটওয়ার্ক সংযোগ না থাকার মতো কোন পরিস্থিতির অবকাশ থাকবে না। নেটওয়ার্কটি ডাটা প্রসেস করতে পারবে প্রতি সেলুলার জোনে প্রায় ২ এমবিপিএস(মেগাবাইট-পার-সেকেন্ড) থেকে ৪ এমবিপিএস হবে। এটি বেশ ধীর গতির হলেও কয়েক হাজার টেক্সট লেনদেনের জন্য যথেষ্ট।
স্যাটেলাইট নেটওয়ার্কের সাথে সংযুক্ত অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীরা এমএমএস(ছবি/ভিডিও ম্যাসেজ) সহ যে কোন টেক্সটিং, ভয়েস কল করতে এবং মোবাইল ডাটা ব্যবহার করে ইন্টারনেট ব্রাউজ করতে পারবেন। এই নেটওয়ার্ক ব্যান্ডউইথ প্রত্যন্ত অঞ্চল সহ পৃথিবীর যে কোন স্থানে ১ থেকে ২ হাজার ভয়েস কলের জন্য যথেষ্ট হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
যোগাযোগ ব্যবস্থার এই নতুন পথচলায় শুরুর দিকে সংযোগ স্থাপন গতি হয়ত আশানুরুপ না হতে পারে। কিন্তু এটি জরুরী পরিস্থিতিতে, দুর্গম জায়গা বা প্রযুক্তির স্পর্শ না পাওয়া কোন গ্রামে নেটওয়ার্ক না পাওয়ার অবস্থার চূড়ান্তভাবে পরিসমাপ্তি ঘটাবে।
পড়ুন: দেশের মোবাইল সিম বিদেশের মাটিতে ব্যবহার করার উপায়
স্যাটেলাইট সংযোগ সমর্থিত স্মার্টফোনের অগ্রযাত্রা
অ্যান্ড্রয়েড ফোনের আগের সংস্করণটিকে আপগ্রেড করলেই এই নেটওয়ার্ক সুবিধা পাওয়া যাবে নাকি একদম নতুন অ্যান্ড্রয়েড-১৪ ফোন কিনতে হবে সে ব্যাপারটি এখনো নিশ্চিত নয়। তবে ইলন মাস্কের স্পেসএক্স এবং স্ট্র্যান্টনের টি-মোবাইল এই দিক থেকে এগিয়ে গেছে। এদের ডিভাইসটি আসন্ন স্টারলিঙ্ক ভি(ভার্সন)-২ স্যাটেলাইট দ্বারা সমর্থিত হবে।
এমনকি বিগত সংস্করণের ফোনগুলোতেও এই নেটওয়ার্ক কাজ করবে কারণ এটি পিসিএস(পার্সনাল কমিউনিকেশন সার্ভিস) স্পেকট্রামে পুরনো ব্যান্ড বা রেডিওকে কাজে লাগাবে। ফলে বেশিরভাগ টি-মোবাইল গ্রাহকদের আসন্ন পরিষেবা উপভোগ করতে নতুন ডিভাইস কিনতে হবে না। প্রতিষ্ঠান দুটি তাদের স্মার্টফোনগুলোকে সরাসরি স্যাটেলাইটের সাথে সংযুক্ত করার পরিকল্পনা ঘোষণা করার পরেই প্রকাশিত হয় এই তথ্যটি।
স্যাটেলাইট স্থাপনের সাথে যোগাযোগ শিল্পের সহ-পরিষেবা এখন পর্যন্ত খুব একটা স্বাভাবিক বিষয় নয়। কিন্তু এ কথা নিশ্চিত করে বলা যায় যে, ২০২৩ সালের শেষের বিশ্ববাসী মানিয়ে নিতে শুরু করবে এরকম পরিষেবার সাথে। আর গুগলও ঠিক সে সময়েই আনতে যাচ্ছে তাদের নতুন ফোনটি। সর্বসাকূল্যে ২০২৩ সালটি হবে স্যাটেলাইট সংযোগ সমর্থিত স্মার্টফোনের অগ্রদূত।
পড়ুন: অরিজিনাল ফোন চেনার উপায়: ফোন কেনার আগে যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখা জরুরি
শেষাংশ
গোটা বিশ্বকে এক নেটওয়ার্কের আওতায় আনতে অ্যান্ড্রয়েড-১৪ ফোনে সরাসরি স্যাটেলাইট সংযোগ এক যুগান্তকারি পদক্ষেপ হতে যাচ্ছে। সেলুলার ডেড জোনের বিড়ম্বনা আর পোহাতে হবে না স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের।
নতুন প্রযুক্তি হিসেবে প্রকল্পটির বিকাশের জন্য যে যথেষ্ট সময়ের প্রয়োজন তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সেই সাথে নির্মাণাধীন অ্যান্ড্রয়েড-১৪-কেও এর সিস্টেম সফ্টওয়্যারগুলোর সাথে মানিয়ে নেয়ার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে। এর উপরই নির্ভর করছে অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীদের ইতিবাচক অভিজ্ঞতা, যা নতুনত্বের আবির্ভাব এবং গ্রহণযোগ্যতার মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান করবে।